• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

পদ্মা মেঘনায় ইলিশ ধরার প্রস্তুতি জেলেদের, আজ থেকে মাছ ধরতে নামবেন জেলেরা

  • ''
  • প্রকাশিত ৩০ এপ্রিল ২০২৪

চাঁদপুর প্রতিনিধি:

চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনা নদীর অভয়াশ্রমে মার্চ-এপ্রিল দুই মাসের অভিযান আজ শেষ হচ্ছে আজ ৩০ এপ্রিল। জেলা টাস্কফোর্সের সম্মিলিত অভিযানে জাটকা প্রতিরোধ অনেকাংশ সফল হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ। নিষেধাজ্ঞা শেষে ১ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে আবারও মাছ ধরার জন্য জেলার প্রায় ৪৪ হাজার নিবন্ধিত জেলে নৌকা এবং জাল মেরামত শেষে ইলিশ পাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে নদীতে নামার প্রস্তুতি নিয়েছে।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁদপুর সদরের ইব্রাহীমপুর, লক্ষ্মীপুর মডেল, হানারচর ইউনিয়ন ও হাইমচর উপজেলার আলগী উত্তর ইউনিয়ন মেঘনা পাড়ের জেলে পল্লিতে দেখা গেছে জেলেদের ইলিশ ধরার প্রস্তুতি।

হাইমচর উপজেলার লামচরী গ্রামের জেলে সাদ্দাম মাল জানান, যখন আমি বুঝতে শিখেছি তখন থেকে মাছ ধরার কাজে জড়িত এবং এখন পর্যন্ত এই পেশায় আছি। বছরের দুটি সময় মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। তখন আমাদের অন্য কাজ করে সংসার চালাতে হয়। আবার যখন মাছ ধরা শুরু হয় এর আগ থেকেই ঋন করে বিভিন্নভাবে নৌকা মেরামত ও জালা ক্রয় করে নদীতে নামি। তবে ইলিশ পাওয়ার বিষয়টি আল্লাহর উপর। নদীতে নামলে অনেক সময় ইলিশ পাওয়া যায়, আবার অনেক সময় খালি হাতে পিরতে হয়।

তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞা দিলে আমরা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকি। তবে সরকার থেকে যে সহায়তা দেয়া হয়, তা দিয়ে সংসার চলেনা। যে কারণে অন্য কাজ করে উপার্জন করি। এবছর ইটের ট্রলারে কাজ করেছি। সরকার জাটকা রক্ষায় যে অভিযান দেয়, তা আরো কঠোর এবং কারেন্টজালের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা দরকার। তাহলে ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

সদর উপঝেলার ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের নিবন্ধিত জেলে সাইফুল ইসলাম, সফিক গাজী, মালেক শেখ। তারা নদীতে নামার জন্য জাল ও নৌকা মেরামতের কাজ করছেন। তারা বলেন, দুই মাস মাছ আহরণ থেকে বিরত থাকায় আমাদের সংসার অনেক কষ্টে চলেছে। কারণ আমরা মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোন কাজ করতে পারি না। যে কারণে ইলিশ পাওয়ার আশা নিয়ে এখন আবার জাল মেরামত করে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

তারা আরও বলেন, আমাদের প্রতিটি নৌকায় ১০ থেকে ১২ জন্য জেলে থাকে। ১২ জনের ১২ পরিবার। আমাদের মাছ পাওয়ার ওপর নির্ভর করে সংসার। মাছ পাওয়া গেলে সংসার ভাল চলে। না পাওয়া গেলে কষ্ট করেই চলতে হয়। অনেকে সন্তানদের নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করেন।
হাইমচর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রশীদ জানান, জাটকার সবচাইতে বড় বিচরণ কেন্দ্র হাইমচর। এখানে কঠোর অভিযান হওয়ায় জেলেরা নদীতে নামতে পারেনি। বাহিরের জেলেদের প্রতিরোধ করা হয়েছে। এর সুফল এ অঞ্চলের জেলেরা পাবে।

সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. তানজিমুল ইসলাম জানান, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর চাঁদপুরের অভয়াশ্রম এলাকার জেলেরা সচেতন ছিল। যে কারণে বাহিরের জেলেরা জাটকা নিধন করতে পারেনি। আমরা এখন জেলেদের বৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরার জন্য উৎসাহ দিচ্ছি।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান দুই মাসের জাটকা রক্ষার অভিযান সম্পর্কে বলেন, এ বছর ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় অভয়াশ্রম এলাকায় ১০টি স্পিডবোট দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ এ বছর রমজান মাসেও দিনরাতে নদীতে অবস্থান করেছে। রমজান মাসজুড়ে নদীতে ছিল আমাদের কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

তিনি আরও বলেন, এ বছর জেলা টাস্কফোর্সের কঠোর অবস্থান থাকায় জেলেরা নদীতে নেমেছে কম। তারপরেও যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নেমেছে তার মধ্যে প্রায় ৩শতাধিক জেলেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়েছি। দুই মাসে প্রায় ৫০লাখ মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট অন্যান্য জাল, ৩ মেট্টিক টন জাটকা ও ৬০টি মাছ ধরার নৌকা জব্দ করা হয়েছে। আটক জেলেদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে প্রায় ১০লাখ টাকা। জব্দকৃত নৌকাগুলো পরবর্তীতে নিলামে বিক্রি করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads